Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।

                 বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।

                                                                           1
1
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী, সরকারের কাছে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাগিদ দিচ্ছে। তারা মনে করছেন, সরকারের প্রধান কাজ এখন জরুরি সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা ।

রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য
বিএনপি:
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, সরকারকে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, দীর্ঘ সময় সংস্কার করতে থাকলে গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ অস্থির হয়ে যেতে পারে ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন তাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি এবং তারা সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছেন ।
জামায়াতে ইসলামী:
জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব এবং তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন ।
বর্তমান পরিস্থিতি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পতিত স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগীদের অপতৎপরতা এবং নানামুখী সংকটের কারণে দলগুলোর মধ্যে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ বাড়ছে। রাষ্ট্রপতির বিতর্কিত মন্তব্য এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি এই চাপকে আরও জোরদার করেছে ।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্রুত নির্বাচনের চাপ রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন উল্লেখ করেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের জন্য চাপ দেবে, যা স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।
                                                                   22 22
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রত্যাশা
দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করা হলে রাষ্ট্রের ও রাজনীতির প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজগুলো সম্পন্ন হবে না, যা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রত্যাশাকে অপূর্ণ রাখবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্প্রতি পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করা।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ।
নতুন করে 'প্রক্লেমেশান অব রিপাবলিক' ঘোষণা করা।
গত তিনটি নির্বাচনের (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪) বৈধতা বাতিল করা।
এই দাবিগুলোর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, যা দ্রুত নির্বাচনের আয়োজনের ফলে সম্ভব নাও হতে পারে ।

আন্তর্জাতিক চাপ
আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও নির্বাচনের জন্য চাপ আসছে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তবে, সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মনে করছেন যে, যদি দ্রুত নির্বাচন করা হয়, তাহলে রাষ্ট্রের ও রাজনীতির প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো সম্পন্ন হবে না, ফলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রত্যাশা পূরণ হবে না ।
নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে হবে, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ মত রয়েছে। তবে, নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।

রাজনৈতিক দলের অবস্থান
নির্বাচনের আয়োজন: রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। বিএনপি সহ বিভিন্ন দল নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ।
কমিশনের সুপারিশ: রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলো আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশগুলো জমা দেবে। এই সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে 
                                                                     22 22
নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা: ভবিষ্যতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে ।
আলোচনা ও সমঝোতা: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিএনপি এবং অন্যান্য দল মনে করছে, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সম্প্রতি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যৌক্তিক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় সম্পর্কে বিএনপি সচেতন এবং তারা জানে কতটা সময় প্রয়োজন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, "যৌক্তিক সময় অতিক্রান্ত হলে বিএনপি ঘরে বসে চিনাবাদাম খাবে না," যা বোঝায় যে, বিএনপি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করবে না এবং তারা জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে 

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে এবং এই দায়িত্ব পালনে কোনো বিলম্ব হলে জনগণ অসন্তুষ্ট হবে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, তারা দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা তৈরি করুক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাক 

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, "নতুন সংস্কারের প্রয়োজন নেই, কারণ জনগণ অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করবে না," যা সরকারের কার্যক্রমের প্রতি তার অসন্তোষ প্রকাশ করে 
সেই সময়টুকু আমরা দেব। সেই সময়টা অতিক্রান্ত হলে আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে অবশ্যই ঘরে বসে চিনাবাদাম খাব না। বাস্তবতার নিরিখে যেটা করার ভবিষ্যতে সেটাই করব।’

জামায়াতের মুখপাত্র দলের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আমরা চাই অতি দ্রুত রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শেষ হোক। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করতে বেশি সময় লাগার কথা না। এরপর দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা মো. শাহ আলম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিকল্প নেই। তাই গণতান্ত্রিক সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। দীর্ঘ দিন ভোটাধিকার বঞ্চিত দেশের জনগণ নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। আমরাও সরকারকে অনেক দিন ধরে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার কথা বলছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চাই

                                                                        22

22

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সাইফুল হক মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। এ জন্য সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত শেষ করতে হবে। সেটা না করতে পারলে সরকারের কোনো সংস্কার বা এজেন্ডা আলোর মুখ দেখবে না। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে।

গত ১৮ অক্টোবর জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগীরা ঘরে-বাইরে, প্রশাসনে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। অন্যদিকে গণ-অভ্যুত্থান সফলকারী জনগণের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় ভিন্ন রকম বক্তব্য এসেছে। এমন একটি কাঙ্ক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সরকারের বক্তব্যের গরমিল জনগণের মনে নানা ধরনের সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে।’

গত ২৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সংস্কার আমরাও চাই। যত দ্রুত নির্বাচন করা যাবে ততই দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। নির্বাচনের যৌক্তিক সময় আমরা দেব। কোনো রকম টালবাহানা আমরা সহ্য করব না।’

শুরু থেকেই দ্রুত নির্বাচনের দাবি

অন্তুর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই কবে নাগাদ নির্বাচন হবে তা জানতে উদগ্রীব রাজনৈতিক দলগুলো। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। দলগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত সংলাপের আহ্বানও জানানো হয়। এরপর গত ২৯ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার এবং নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ শুরুর অনুরোধ জানান। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ৩১ আগস্টের বৈঠকে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরতে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। তবে এ জন্য সরকারকে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি বলেও দলগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়। গত ৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে দ্রুত রাষ্ট্র সংস্কার, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয় বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। প্রধান উপদেষ্টাও রাজনৈতিক দলগুলোকে জানান, নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার।

ওই দিন সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে রোডম্যাপ দিতে।’

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে বলা হয়, ‘আমরা দুটি বিষয় চেয়েছি, একটি রোডম্যাপ হবে সংস্কারের, আরেকটি নির্বাচনের। সংস্কার সফল হলে নির্বাচন সফল হবে।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সব সংস্কারের দায়িত্ব এই সরকারের না। গুরুত্ব দিতে হবে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারকে। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন কবে হবে সেটার রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মান সফল নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে। প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা বলেছি যত দূর পর্যন্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সংস্কার সম্ভব, তত দূর পর্যন্ত সংস্কার করতে হবে। বাকি যেসব সংস্কার দরকার, তা পরের নির্বাচিত সরকার এসে করবে।’

আগামী বছর নির্বাচনের আভাস

গত ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ হয়। তাতে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে ১৮ মাস বা দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের লক্ষ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনো পরিস্থিতিতে পূর্ণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

এরপর গত ১৭ অক্টোবর চ্যানেল আইয়ের ‘আজকের পত্রিকা’ অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করাটা হয়তো সম্ভব হতে পারে। অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। এটা প্রাইমারি অ্যাজাম্পশন (প্রাথমিক অনুমান)।’ এই বক্তব্য পরদিনের সংবাদপত্রগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হলে তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ডিসিশন। এর সময় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঠিক হবে। তিনিই একমাত্র এটা ঘোষণার এখতিয়ার রাখেন।’ এরপর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা, আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় আসিফ নজরুল রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘১৬ বছর ধৈর্য রেখেছেন এখন ধৈর্যহারা হলে হবে না। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দিনের পর দিন ভরসা রেখেছি, কিন্তু তারা করেনি। হাজার হাজার মানুষ নিকৃষ্ট গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দেয়নি, উত্কৃষ্ট গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছে। সে জন্য শুধু নির্বাচন দিলে হবে না। আমাদের সংস্কারও করতে হবে।’

ইসি পুনর্গঠনের পর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ!

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এমন আভাস মিলেছে যে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পর নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হতে পারে। গত ১৯ অক্টোবর সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার শিগগিরই একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে। দলনিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য সংবাদ সম্মেলনে জানান তাঁর বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

                                                                            22 22

মাহফুজ আলম ওই দিন আরো জানান, পরবর্তী সময়ে ভোটারতালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে, কবে নির্বাচন হবে—এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখন আপনারা দেখতে পাবেন রোডম্যাপ কিভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এদিকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি সম্পর্কে একটি সংস্কার কমিশনের প্রধান কালের কণ্ঠকে বলেন, সংস্কারের কাজ শেষ না করে নির্বাচন দিলে তা হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

দ্রুত নির্বাচনে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন ও রাজনৈতিক সরকারকে দায়িত্ব দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনাগুলোতে আগামী নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, তা নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোরও আগ্রহ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্প্রতি একাধিক আলোচনায় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবনা জানতে চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একের পর এক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাময়িক হিসেবে সবাই বিবেচনা করছে। নির্বাচন দিতে দেরি হলে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা বাড়বে এবং বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থনও কমতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই এটি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিও চলতে পারে।

 

Post a Comment

0 Comments